Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাঙালির নবান্ন উৎসবে সুগন্ধি চাল

কৃষিবিদ ড. মো. আখতারুজ্জামান

বাংলার প্রকৃতি তার আপন মহিমার সবটুকু যেন উজাড় করে ছড়িয়ে দিয়েছে প্রতিটি বাঙালি নরনারীর মনে-প্রাণে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে নানান ধরনের রূপ রস আর সুবাসিত সৌরভ আমাদের হৃদয় মনকে শিহরিত করে। প্রতিটি ঋতুর মাঝেই বাঙালি খুঁজে নেন বৈচিত্র্যময়তায় পরিপূর্ণ নানান উৎসব। তাই তো উৎসব প্রিয় বাঙালি প্রকৃতির আপন মহিমার সবটুকুর সর্বোচ্চ ব্যবহারে আনন্দ বিনোদনে মাতোয়ারা হয়ে সাধ ও সাধ্যের  সমন্বয় করে উৎসব আমেজে  নিজেদের মতো করে চাঁদের হাট বসিয়ে  স্ব স্ব হৃদমাঝারে চিত্ত বিনোদনের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের চেষ্টা করে থাকেন।
বিত্ত বৈভবের প্রাচুর্য না থাকলেও বাঙালির আমোদ আহলাদ ও আত্মিক আতিথেয়তার এতটুকু কমতি নেই। এজন্য বুঝি, তাবৎ বাঙালি কবি সাহিত্যিক তাঁদের মনের মাধুরী মিশিয়ে বাংলার প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রকৃতি নির্ভর উৎসব নিয়ে নানান কাব্য কথন রচনা করে চলেছেন। এ দেশের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু কৃষি উৎপাদনের জন্যে অনেক বেশি উপযোগী, যেমনটি বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। কবির ভাষায় বলতে হয়, ধন ধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা/তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা/ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।/এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,/সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি,/সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।
বাংলার এ মাটিতে শীত গ্রীষ্ম বর্ষাসহ বছরের সকল অর্তবে সত্যিই সোনার ফসল ফলে । ষড়ঋতুর পথ বেয়ে বঙ্গ ঋতুনাট্যে শীতের হিমেল পরশ আর  রাশি রাশি, ভারা ভারা কনক আভাময় পাকা ধান খেতের শোভা নিয়ে বাঙালির দোরে কড়া নাড়ে হেমন্ত ঋতু। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমন ধান ফলানো কৃষক তাঁর সোনালী ধান খেতের এমন দৃশ্যে মনে পায় অনাবিল শান্তির বারতা। দিগঙ্গনার অঙ্গন হেমন্তের দানে পূর্ণতা প্রাপ্তির আনন্দে নব আনন্দে মেতে ওঠেন বাংলার কৃষক-কৃষানিরা। “নবান্ন” বা নতুন ধানের অন্ন কেন্দ্রিক মূলতঃ একটি লোকজ উৎসব। কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় প্রধান খাদ্যশস্য ধান সংগ্রহকে কেন্দ্র  এ উৎসব পালিত হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে অধিক শস্য প্রাপ্তি, বৃষ্টি, সুসন্তান লাভ ও পশুসম্পদ কামনা এ উৎসব প্রচলনের প্রধান কারণ। ভারত ও বাংলাদেশের নানাবিধ অঞ্চলে বিভিন্ন স¤প্রদায় ও গোত্রের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নবান্ন উৎসব পালন করবার চল রয়েছে। হেমন্তে আমন ধান কাটার পর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনে কিংবা পৌষ মাসে গৃহস্থরা এ উৎসব পালনে মেতে উঠতেন।
বাঙালির নবান্ন উৎসবের একটা বড় জায়গা জুড়ে আছে আমাদের দেশে উৎপাদিত নানা ধরনের সুগন্ধি চাল। নবান্ন উৎসবে এসব সুগন্ধি চালের ফিরনি পায়েশ, জর্দ্দা, ভুনা  খিচুড়ির বেশ প্রচলন রয়েছে। আবার একটু মানসম্পন্ন কলেবরের নবান্ন উৎসবে পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি, রান্নাতেও সুগন্ধি চালের  ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সুগন্ধি চাল আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য। উত্তরবঙ্গের জেলা দিনাজপুর,   ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, নওগাঁ, রাজশাহী প্রভৃতি জেলা সুগন্ধি চাল উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে। দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি কাটারিভোগ চালের খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশে বিদেশে। একটা সময় স্থানীয় জাতের কাটারিভোগ, কালিজিরা, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, বাদশাভোগ, খাসকানি, বেগুনবিচি, তুলসীমালা প্রভৃতি সুগন্ধি চালের কদর থাকলেও হালে আমাদের দেশের ধান বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চফলনশীল সুগন্ধি ধান হিসেবে উদ্ভাবন করেছেন, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৬৩, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৯০। আবার বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে উদ্ভাবন করেছেন বিনা ধান৯ ও বিনা ধান১৩ আরো দু’টি সুগন্ধি চাল। এসব সুগন্ধি ধানের মধ্যে একমাত্র ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৬৩ ব্যতিরেকে সবগুলো ধানই আমন মৌসুমে জন্মে থাকে, যা আমাদের নবান্ন উৎসবের এক নবতর সংযোজন।  সুগন্ধি চালের সুগন্ধ এখন জাতীয় অঙ্গন ছেড়ে আন্তর্জাতিক পরিমÐলে স্থান করে নিয়েছে। এ বছর জুলাই মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এফসি ট্রেডিং কর্পোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানকে এক হাজার মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এবারের নবান্ন উৎসবে এটিও আমাদের জন্যে একটা আনন্দ বার্তা বটে।
২০১৯ সালের শেষ লগনে চীনের উহান থেকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক মহামারি মানুষের স্বাভাবিক গতিপথ ও আনন্দ উৎসবে অনাহ‚ত বাঁধা সৃষ্টি করে চলেছে। বৈশ্বিক এই অতিমারির মধ্যেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ   নেতৃত্বে কৃষি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, কৃষিতে ব্যাপক প্রণোদনা প্রদান, ৪% সরল সুদে কৃষকের ঋণ সহায়তা প্রদান, ৫০-৭০% ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহের কারণে করোনাকালে আমাদের কৃষি মুখ থুবড়ে পড়েনি বরং ধান উৎপাদনের আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং চতুর্থ থেকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে; কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের হার বৃদ্ধিতে এশিয়া মহাদেশের শীর্ষস্থান লাভ করেছে। এ ছাড়া ছোট্ট বাংলাদেশের সার্বিক কৃষিতে রয়েছে আরো অনান্য আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং অর্জন।
সর্বোপরি কারোনাকালে লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষা বোরো ও আউশ ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। এ কৃতিত্বের বড় অংশীদার কৃষক ভায়েরা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষকের পাশে রয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয় ও তাদের সকল সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তৃণমূলে কৃষকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের বিশাল কর্মীবাহিনী।
আশা করা যাচ্ছে বোরো ও আউশের মতো আমন ধান উৎপাদনেও লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষা বাম্পার ফলন হবে; কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে, সোনালী ধানে ভরবে তাঁদের গোলাঘর; সুগন্ধি চালের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। কৃষি খাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভপর হবে। য়

পরিচালক (প্রশাসন), জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি, মোবাইল : ০১৭১১৮৮৪১৯১, ই-মেইল : akhtar62bd@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon